১৯ আইসিডিতে বাড়তি চার্জ কার্যকর, মানতে নারাজ ব্যবসায়ীরা

শুধু রপ্তানি কনটেইনার নয়; খালি কনটেইনার খালাস ও পরিবহনেও একই রকমভাবে চার্জ একযোগে বাড়িয়েছে ১৯ টি আইসিডি। আমদানি-রপ্তানি ও খালি কনটেইনার মিলিয়ে বছরে মোট ২২ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে বেসরকারি ১৯টি কনটেইনার ডিপো। আগে এই ডিপোগুলো ৩৮ ধরনের পণ্য খালাসের কাজ করলেও এখন হ্যান্ডেল করছে ৬৫ ধরনের আমদানি পণ্য। আর রপ্তানী পণ্যের শতভাগ হ্যান্ডেল করে আইসিডিগুলো।
গুরুত্বপূর্ণ এই সেক্টরে এক মাসেরও বেশ সময় ধরে উভয়পক্ষ এমন মুখোমুখি অবস্থানে থাকলেও শেষ পর্যন্ত কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়। সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেয়নি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষও।
ব্যবসায়ীরা বলছেন বিশ্ব বাজারে শুল্ক অস্থিরতা, দেশে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন, ব্যাংক সুদের হার বৃদ্ধি, যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বৃদ্ধি ও শিল্প কারখানার উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার পরও বেসরকারী আইসিডি একযোগে ৩৩ থেকে ৬০ শতাংশ চার্জ বাড়ানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটি বাস্তবায়ন করায় তাদের পণ্য পরিবহন ও উৎপাদন ব্যয় এক লাফে বেড়ে যাবে প্রায় ৫০ শতাংশ। এর মধ্যে যদি বন্দর কর্তৃপক্ষও তাদের ট্যারিফ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে তাহলে বন্ধ হয়ে যাবে অনেক শিল্প কারখানাও। প্রসঙ্গত, বন্দর কর্তৃপক্ষও তাদের ট্যারিফ গড়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।
চার্জ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বেসরকারি আইসিডি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, ‘নতুন চার্জ পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আমরা কার্যকর করেছি। প্রতি চার বছর পর পর চার্জ পুনরায় নির্ধারণ করি আমরা। মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন, সুদের হার বৃদ্ধি, শ্রমিক মজুরি ও যন্ত্রপাতির ব্যয়বৃদ্ধি এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচের কারণে সেবা মাসুলের মূল্য তালিকা পুনর্র্নিধারণ করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা আপত্তি জানালেও অফডকগুলো চালু রাখতে হলে আর কোনো বিকল্প ছিল না আমাদের হাতে।’ তবে দ্বিমত পোষণ করে বিজিএমইর পরিচালক ও ইন্ডিপেনডেন্ট আ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম আবু তৈয়ব বলেন, ‘একযোগে সব চার্জ বাড়ানোর উপযুক্ত সময় এটি নয়। বন্দর গড়ে ৪০ শতাংশ ট্যারিফ বাড়াচ্ছে। আইসিডিগুলো গড়ে ৫০ শতাংশের উপরে চার্জ বাড়াচ্ছে। তাহলে আমরা কোথায় যাবো। বর্ধিত এই ট্যারিফ দেওয়ার মতো সক্ষমতা আমাদের এখন আছে কি না সেটি ভেবে দেখা উচিত ছিল নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় কিংবা বন্দর কর্তৃপক্ষের। কারো মতামত আমলে না নিয়ে যে সিদ্ধান্ত আইসিডি মালিকরা চাপিয়ে দিচ্ছে সেটা পরিস্থিতি পরে ঘোলাটে হতে পারে।’
এদিকে বিজিএমইএ জানিয়েছিল, বর্ধিত মাসুল দিয়ে তারা কোনো পণ্য আইসিডি থেকে খালাস করবেন না। এই মুহূর্তে চার্জ না বাড়াতে তারা আইসিডি মালিকদের চিঠিও দিয়েছিল। কিন্তু তাদের অনুরোধে সাড়া দেয়নি বিকডা।
এখন ২০ ফুট রপ্তানি কনটেইনারের প্যাকেজ চার্জ (স্টাফিং থেকে বন্দরে পাঠানো পর্যন্ত) ৩ হাজার ৭১৩ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৯ হাজার ৯০০ টাকা। ৪০ ফুট কনটেইনারের ক্ষেত্রে এই চার্জ ৪ হাজার ৯৫০ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৩ হাজার ২০০ টাকা। আগে ৪০ ফুট হাই-কিউব ও ৪৫ ফুট কনটেইনারে ভিন্ন কোন চার্জ ছিল না। এক্ষেত্রে আদায় করা হতো ৪০ ফুট কনটেইনারের সমপরিমাণ প্যাকেজ চার্জ। এখন সেটি ৬ হাজার ৬৫০ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৯০০ টাকা। গ্রাউন্ড রেন্ট চার্জ প্রতি ২০ ফুট কনটেইনারের জন্য ৩৫ টাকা বাড়িয়ে ১৫০ টাকা, ৪০ ফুট ও ৪০ হাই কিউব এবং ৪৫ ফুটের কনটেইনারের জন্য ৭০ টাকা বাড়িয়ে ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আজ থেকে একটি ২০ ফুট খালি কনটেইনারের গ্রাউন্ড রেন্ট (ডিপোতে একটি কনটেইনার কতদিন অবস্থান করবে) ৩৫ টাকা বাড়িয়ে ১৫০ টাকা এবং ৪০ ফুট কনটেইনারের গ্রাউন্ড রেট ৭০ টাকা বাড়িয়ে ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। লিফট-অন/লিফট-অফ চার্জ (জাহাজের ক্রেন ব্যবহারের চার্জ) ২৩০ টাকা বাড়িয়ে সাড়ে ৭০০ টাকা, ২০ ফুট ও ৪০ ফুট কনটেইনারের ডকুমেন্টেশন চার্জ (প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত বা প্রক্রিয়াকরণের চার্জ) ১৭৪ টাকা বাড়িয়ে ৪৫০ টাকা এবং ২০ ফুট খালি কনটেইনার হ্যান্ডলিং চার্জ ৭৯৫ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৫০০ টাকা ও ৪০ ফুট কনটেইনারের ক্ষেত্রে চার্জ ১ হাজার ৫৯০ টাকা বেড়ে ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। হলেজ বা পরিবহন খরচ ২০ ফুট কনটেইনারের জন্য ৭৯৫ টাকা বাড়িয়ে ২ হাজার ৫০০ এবং ৪০ ফুট ও ৪০ ফুট হাই কিউব/৪৫ ফুট কনটেইনারের জন্য ১ হাজার ৫৯০ টাকা বাড়িয়ে ৫ হাজার টাকা করা হয়েছে।
বেড়েছে সিএফএস সেড ও গ্রাউন্ড রেন্টও
সাতদিন ফ্রি টাইমের পর পণ্য সিএফএস সেডে স্টোর করে রাখার ক্ষেত্রে প্রতি ঘনমিটার পণ্যের জন্য ১৬ টাকা বাড়িয়ে ৪৫ টাকা এবং শাটআউট কার্গোর ক্ষেত্রে ফ্রি টাইম ছাড়াই প্রতি ঘনমিটার পণ্যের জন্য ১৬ টাকা বাড়িয়ে ৪৫ টাকা চার্জ নির্ধারণ করা হয়েছে। রেফার কনটেইনারের প্লাগইন চার্জ ৫০০ টাকা বাড়িয়ে ২২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া স্টোরিং চার্জ ৩ টাকা বাড়িয়ে ৬ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া ২০ ফুট কনটেইনারের গ্রাউন্ড রেন্ট ৩৫ টাকা বাড়িয়ে ১৫০ টাকা এবং ৪০ ফুট ও ৪০ ফুট হাই কিউব/৪৫ ফুট কনটেইনারের গ্রাউন্ড রেন্ট ৭০ টাকা বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করা হয়েছে।