মিয়ানমার সীমান্তে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণ, বাড়ছে অপরাধ ও অনুপ্রবেশের ঝুঁকি

মিয়ানমারের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অংশ এখন বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। ফলে সীমান্ত এলাকায় মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান, জেলে অপহরণ, মুক্তিপণ আদায় এবং রোহিঙ্গা পাচারের মতো অপরাধ বাড়ছে।
সীমান্ত ঘেঁষে আরাকান আর্মির তৎপরতা
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নাফ নদী ও স্থল সীমান্তজুড়ে আরাকান আর্মির অবস্থান দৃঢ় হয়েছে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযানের জন্য অর্থ ও অস্ত্র সংগ্রহ করতেই তারা এসব কার্যক্রম চালাচ্ছে। সীমান্তে বাংলাদেশ কড়াকড়ি বাড়ানোর পর সংগঠনটি নানা উপায়ে চাপ তৈরি করার চেষ্টা করছে।
জেলে অপহরণ ও মুক্তিপণ
শুধু আগস্ট মাসেই একাধিকবার নাফ নদী থেকে জেলেদের অপহরণ করা হয়েছে। ২৬ আগস্ট টেকনাফ থেকে ১১ জেলেকে ট্রলারসহ ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। আগস্টজুড়ে মোট ৬৩ জন জেলে অপহৃত হয়েছেন বলে ট্রলার মালিকরা জানিয়েছেন। গত ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ২৬৭ জেলে অপহৃত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৮৯ জনকে ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে।
কোস্টগার্ড ও বিজিবির সতর্কতা
অপহরণ ও চোরাচালান রোধে কোস্টগার্ড ও বিজিবি সীমান্তে টহল জোরদার করেছে। ২৯ আগস্ট নাফ নদীতে অনুপ্রবেশের আগে ১২২ জেলেকে ফেরত আনে কোস্টগার্ড। বিজিবি জানিয়েছে, সীমান্তে নতুন ব্যাটালিয়ন মোতায়েনসহ নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
অস্ত্র ও মাদক পাচারের রুট
কক্সবাজার সীমান্তকে অস্ত্র ও মাদক পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহার করছে আরাকান আর্মি। সম্প্রতি টেকনাফে অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে বিজিবি। পাশাপাশি ইয়াবা ও আইসের মতো মাদকের চালানও নিয়মিত ধরা পড়ছে। গত এক বছরে বিজিবি শুধু সীমান্ত এলাকায় ১,৩২১ কোটি টাকার মাদক জব্দ করেছে।
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চাপ
সীমান্তে প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় আছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের অভিযোগও উঠেছে। ফলে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছে।
সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক বার্তা
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নেতা ও মানবাধিকারকর্মীরা জানিয়েছেন, আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে এবং টাকা নিয়ে সীমান্ত পার হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিজিবি কর্মকর্তারা সীমান্তে অস্ত্র ও মাদক চোরাচালানকে বড় হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
বাংলাদেশের সাবেক সামরিক অ্যাটাশে মেজর জেনারেল (অব.) মো. শহীদুল হক বলেন,
“মিয়ানমারে নির্বাচন ঘিরে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর দ্বন্দ্ব বেড়েছে। অর্থ ও অস্ত্র সংকটে পড়া আরাকান আর্মি সীমান্তে আরও তৎপর হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশকে এ বিষয়ে আরও কঠোর অবস্থান নিতে হবে।”