বিদ্যালয়ে প্রভাব বিস্তার ও দখল চেষ্টার অভিযোগে উপশহরের সাবেক কাউন্সিলর বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে!

শাহজালাল উপশহর হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো: মাহমুদ হাসান, উপশহরের সাবেক কাউন্সিলর ও প্রভাবশালী বিএনপি নেতার প্রত্যক্ষ মদদে আসন্ন ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে সরকারি প্রবিধান অনুসরণ না করে ইচ্ছেমতো এবং সম্পুর্ণ অনিয়মতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে নিজের পছন্দ মতো লোক দিয়ে কমিটি গঠনের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অভিভাবকদের মতামতকে তোয়াক্কা না করে ভোটার তালিকায় শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের পিতার নাম অন্তর্ভুক্ত করে তালিকা প্রণয়ন করেছেন।
অভিভাবকদের লিখিত আপত্তি সত্ত্বেও এমনকি অনেক অভিভাবক তার সন্তানের মা কে লিখিত ভাবে অভিভাবকত্ব প্রদান করা সত্ত্বেও তিনি তা অগ্রাহ্য করে ভোটার তালিকা প্রণয়ন করেন। এমনকি এ ভোটার তালিকায় অনেক প্রবাসীর নামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অথচ ম্যানেজিং কমিটির সর্বশেষ প্রবিধানে বলা হয়েছে অভিভাবক হবে শিক্ষার্থীর পিতা অথবা মাতা এবং পিতা মাতার অনুপস্থিতিতে আইনানুগ অভিভাবক।
এ বিষয়ে স্কুলেরই এক শ্রেণি শিক্ষক আপত্তি করে বলেন, অভিভাবক সব পিতা হলে সংরক্ষিত মহিলা অভিভাবক নির্বাচিত হবে কিভাবে? তিনি প্রবিধান দেখালে তাকে প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের প্রত্যক্ষ মদদে এবং উপস্থিতিতে একজন শিক্ষককে শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত করেন এমনকি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিজেও উনাকে মারার জন্য চেয়ার থেকে উঠে বারবার বলতে থাকেন মারা লাগলে মারমু...।
এ ব্যাপারে উক্ত শিক্ষক এডহক কমিটির সভাপতি বরাবর লিখিত অভিযোগ করলে, সভাপতি কমিটির সদস্য বৃন্দ,শিক্ষক মন্ডলী এবং প্রধান শিক্ষকের আস্থাভাজন সেই আলোচিত বিএনপি নেতা সহ উনাদের কাছের আরও ২/১ জনকে নিয়ে লোক দেখানো মিটিং করেন এবং অভিযোগের সত্যতা পেলেও অভিযোগকারী শিক্ষকের সম্পুর্ণ ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে অভিযোগকারি ও অভিযুক্ত উভয় শিক্ষকদেরকেই হাস্যকরভাবে বুক মিলানোর মাধ্যমে মীমাংসার নাটক সাজিয়ে বিষয়টিকে ধামাচাপা দেন । অথচ, অভিযুক্তদের ব্যাপারে কোন প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি যা সকল শিক্ষকদের মাঝেই ক্ষোভের সঞ্চার করে।
অভিযোগকারি শিক্ষক অনেকটা চাপের মুখেই তা মেনে নিতে বাধ্য হন। আলোচিত এ বিষয়টি স্কুলের ছাত্র- শিক্ষক, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। উল্লেখ্য, উল্লেখিত বিএনপি নেতা ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের গ্রামের বাড়ি একই জেলার হওয়ায় এবং আরও ৩ জন শিক্ষকের গ্রামের বাড়ি একই জেলায় হওয়ায় উক্ত বিদ্যালয়ে উল্লেখিত শিক্ষকদের সমন্বয়ে একটি আঞ্চলিক সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে এবং সর্বক্ষেত্রে উনাদের দাপটে স্কুলের পড়ালেখার মান অত্যন্ত নিম্নগামি হচ্ছে, এতে অভিভাবকরা আতংকিত।
উপশহরের আলোচিত এই বিএনপি নেতা উক্ত বিদ্যালয়ে অতীতে সভাপতি থাকা অবস্থায় বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে ক্ষমতার অপব্যবহার করে, আঞ্চলিকতাকেই যোগ্যতার একমাত্র মাপকাঠি হিসেবে উনাকে সহকারি প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। এছাড়াও ঐ সময় নিজের জেলাকে প্রাধান্য দিয়ে ঐ জেলারই আরও ৩ জন শিক্ষক ও ২ জন কর্মচারী নিয়োগ প্রধান করেন। বর্তমানেও তিনি নিজের আস্থাভাজন ও নিজ অঞ্চলের শিক্ষকদের কমিটিতে আনার হীন উদ্দেশ্যে কয়েকজন শিক্ষককে যারা দীর্ঘদিন যাবত এ স্কুলে শিক্ষকতা করে আসছেন এবং অতীতের সব গুলো ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিলেন তাদেরকে পরিকল্পিতভাবে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দিয়ে খসড়া ভোটার তালিকা প্রণয়ন করেন, যা স্কুলে চরম বিশৃঙ্খলার জন্ম দিয়েছে এবং স্কুলের স্বাভাবিক একাডেমিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। এগুলোর কারণেই কিছুদিন পুর্বে অনুষ্ঠিত বিদ্যালয়ের প্রাক নির্বাচনী পরিক্ষায় প্রায় ৮৫% শিক্ষার্থীই অকৃতকার্য হয় এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা চরমভাবে উদ্বিগ্ন।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কখনো সময় মতো স্কুলে আসেননা। দেরিতে স্কুলে আসা নিয়মে পরিনত হয়ে গেছে। এতে শ্রেণি কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে। উনি শিক্ষকতার পাশাপাশি উপশহরের ই ব্লকে উনার একটা গ্রোসারি শপও রয়েছে। বেশির ভাগ সময়ই এই গ্রোসারি শপে উনি সময় দিয়ে থাকেন। স্কুলে এসে উনার মোবাইলে সারাক্ষণই দোকানের ক্যামেরা মনিটরিং ও শেয়ার মার্কেট নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকেন। এছাড়াও এডহক কমিটিকে প্রভাবিত করে, সম্পুর্ন এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে উনার ব্যাক্তিগত বেতন কয়েকগুণ বৃদ্ধি করেছেন। এডহক কমিটির এখতিয়ার বহির্ভূত ভাবে শিক্ষক নিয়োগ, বেতন প্রদান সহ অনেক অনিয়মের সাথে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সরাসরি জড়িত। এলাকার প্রভাবশালী বিএনপি নেতার আস্থাভাজন থাকায় শিক্ষক ও অভিভাবকরা ভয়ে মুখ খুলছেননা।
এছাড়াও এডহক কমিটির সব গুলো সভায় নিয়ম বহির্ভূত ভাবে কমিটির সদস্য না থাকা সত্ত্বেও উক্ত নেতার উপস্থিতি এবং স্কুলের রেজুলেশন বই, যা স্কুলের গোপন নতি সেগুলো দেখা, কপি করে নেয়া এগুলো জনমনে অনেক প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। সেই আলোচিত নেতার ক্ষমতাবলে এডহক কমিটি গঠনে স্কুলের অনেক সিনিয়র শিক্ষককে ডিংগিয়ে উনার আস্থাভাজন ও নিজ এলাকার শিক্ষক মোস্তাক আহমদ চৌ. কে শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত করতে প্রভাবিত করেন, যা শিক্ষকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি করে।
উক্ত বিদ্যালয় থেকে বছর দুয়েক পুর্বে পদত্যাগ কৃত প্রধান শিক্ষক মো: লুতফুর রহমান চৌধুরী ও বিদ্যালয়ের আরেক প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক মো: আব্দুল্লাহ আল জাফর ( যিনি স্কুলে সর্বোচ্চ বার শিক্ষক প্রতিনিধি ছিলেন)দের বিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত গ্রাচুয়্যাটির টাকা বিভিন্ন অজুহাতে উক্ত আলোচিত নেতার নির্দেশে এবং প্রধান শিক্ষকের অনিচ্ছায় ও উনাদেরকে হয়রানি করার হীন উদ্দেশ্যে এবং সম্পুর্ন ব্যক্তিগত আক্রোশের জন্য এই টাকা এখনো পরিশোধ করা হচ্ছেনা এবং ভবিষ্যতে যাতে না দেয়া হয় তার জন্য উনার উপস্থিতি স্বাক্ষর সহ রেজুলেশন লেখা হয়। কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, অতীতের সব গুলো নির্বাচনে ঐ নেতা সরাসরি অংশগ্রহণ করেন এবং সর্বশেষ নির্বাচনে উনি পরাজিত হোন, সেই নির্বাচনে পরাজয়ের জন্য উক্ত শিক্ষকদেরকে তিনি দায়ী মনে করেন এবং ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকেই তিনি এই নির্দেশনা দেন। এ বিষয়ে অনেক অডিও, ভিডিও ক্লিপস, লিখিত প্রমাণপত্র সহ অনেক প্রমানই এ প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে।
এছাড়াও স্কুলের পুরাতন বই,কাগজপত্র বিক্রি, ক্যান্টিনের ভাড়া,রেজিষ্ট্রেশন ফি,কোচিং ফি, গাইড বই লাগানোর জন্য প্রকাশনীর কাছ থেকে প্রাপ্ত বড় অংকের টাকা আত্নসাৎ সহ বিভিন্ন আর্থিক কেলেংকারির সাথে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সরাসরি জড়িত রয়েছেন। স্কুলের বর্তমান সার্বিক এ পরিস্থিতি নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকার সচেতন মহল খুবই উদ্বিগ্ন।
সুতরাং এ স্কুলকে রাজনৈতিক দখল মুক্ত ও পড়ালেখার মানোন্নয়ন করতে অভিভাবকসহ সচেতন মহলের দাবি।
