আমার সিলেট
বিশ্ব
৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বিক্ষোভে জেন-জি প্রজন্মের তরুণদের নেতৃত্ব, পদত্যাগ করলেন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি

নিজস্ব প্রতিবেদক
১২
জেন-জি
পদত্যাগ
নেপাল
বিক্ষোভে জেন-জি প্রজন্মের তরুণদের নেতৃত্ব, পদত্যাগ করলেন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি

দক্ষিণ এশিয়ার হিমালয় কন্যা নেপাল ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ রাজনৈতিক সঙ্কটে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের পর দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। টানা দুই দিনের সহিংসতায় অন্তত ২১ জন নিহত২৫০ জনের বেশি আহত হওয়ার পর অবশেষে মঙ্গলবার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি

‘জেন-জি আন্দোলন’ থেকে দাবানল

সরকারি সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে তরুণ-তরুণীরা সোমবার সকাল থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন। “জেন-জি আন্দোলন” নামে এই কর্মসূচি মুহূর্তের মধ্যে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। তাদের হাতে ছিল প্ল্যাকার্ড— “দুর্নীতি বন্ধ করো, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নয়”, “তরুণরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে”

রাজধানী কাঠমান্ডুর শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দ্রুত সংঘর্ষে রূপ নেয়। সংসদ ভবন ঘেরাও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তারা। এসময় নিরাপত্তা বাহিনীর কাঁদানে গ্যাস, জলকামান ও গুলিতে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে।

আগুন-অবরোধ-কারফিউ

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাঠমান্ডুতে অনির্দিষ্টকালের কারফিউ জারি হয়, পরে ললিতপুর ও ভক্তপুরেও একই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নামেন। সংসদ ভবন ও কয়েকজন শীর্ষ নেতার বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরজু দেউবা রানার মালিকানাধীন একটি বেসরকারি স্কুলেও আগুন ধরিয়ে দেন তারা।

ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সব ফ্লাইট স্থগিত করে বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। কয়েকটি শহরেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

শেষমুহূর্তে পতন

অলি জাতির উদ্দেশে ভাষণে শান্ত থাকার আহ্বান জানান এবং তদন্ত কমিটি, নিহত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ, আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসার ঘোষণা দেন। কিন্তু সেনাপ্রধান আশোক রাজ সিগদেলের সঙ্গে বৈঠকের পর অবশেষে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। প্রেসিডেন্টের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার মধ্য দিয়ে তার চতুর্থ মেয়াদের অবসান ঘটে।

সরকারের ভাঙন ও অনিশ্চয়তা

অলির পদত্যাগের পর মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য ইতোমধ্যে সরে দাঁড়িয়েছেন। ক্ষমতাসীন জোট সরকার ভাঙনের মুখে পড়েছে। নেপালি কংগ্রেস ও মাওবাদী সেন্টারসহ একাধিক দল জোট থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের ইঙ্গিত দিয়েছে। ন্যাশনাল ইনডিপেন্ডেন্ট পার্টির ২১ এমপি একযোগে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।

ফলে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিরোধীরা অস্থায়ী সরকার গঠন ও আগাম নির্বাচনের দাবি তুলছে। সেনাবাহিনী সরাসরি ক্ষমতা গ্রহণে অনাগ্রহী হলেও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে।

মতামত (0)