চূড়ান্ত প্রার্থী বাছাইয়ে উত্তেজনায় সিলেট বিএনপি

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সিলেটে বিএনপির রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। জেলার ছয়টি আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন কে পাচ্ছেন—তা নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা। ইতোমধ্যে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা ঢাকায় ডাক পেয়েছেন এবং নির্বাচনী এলাকায়ও ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগে।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের মুখোমুখী হবেন সিলেটের প্রার্থীরা। জেলা বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করলেও, কারা কারা ডাক পেয়েছেন—তা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে জানা যায়নি।
প্রবাসী প্রার্থীদের দৃশ্যমান দাপট
এবারের মনোনয়ন দৌড়ে প্রবাসী নেতাদের তৎপরতা বিশেষভাবে চোখে পড়ছে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসরত বিএনপি নেতাদের বড় একটি অংশ দেশে ফিরে গণসংযোগ, উঠান বৈঠক ও ত্রাণ বিতরণে অংশ নিচ্ছেন। স্থানীয় নেতারা বলছেন, প্রবাসীদের দীর্ঘ অনুপস্থিতি ও জনসম্পৃক্ততার ঘাটতি তাদের জন্য প্রতিবন্ধকতা হতে পারে।
সিলেটের ছয় আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ৩১ জন
সিলেটের ছয় আসনে বিএনপি থেকে এবার ৩১ জন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশী। স্থানীয় সংগঠক থেকে শুরু করে প্রবাসী নেতারাও ধানের শীষের টিকিটের আশায় মাঠে নেমেছেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তারা নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছেন, ফলে পুরো জেলাজুড়ে নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে।
সিলেট-১ (সদর-ছাতক)
এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের দুই উপদেষ্টা—খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ও আরিফুল হক চৌধুরী। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন মুক্তাদির, আর দুইবারের নির্বাচিত মেয়র আরিফুল হক এবারও দৌড়ে আছেন।
সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর)
এ আসনে মনোনয়ন লড়াই মূলত দুইজনকে ঘিরে—নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদী লুনা এবং কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হুমায়ুন কবীর। তাদের সমর্থকদের দ্বন্দ্বে এলাকাজুড়ে বিএনপিতে দ্বিধাবিভক্তি স্পষ্ট।
সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা-বালাগঞ্জ-ফেঞ্চুগঞ্জ)
ধানের শীষ প্রতীক পেতে মাঠে আছেন এম এ মালিক, ব্যারিস্টার এম এ সালাম, আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, আবদুল আহাদ খান জামাল, ও ব্যারিস্টার রিয়াসাদ আজিম আদনানসহ ছয়জন প্রার্থী।
সিলেট-৪ (জৈন্তাপুর-গোয়াইনঘাট-কোম্পানীগঞ্জ)
এ আসনে রয়েছেন মিফতাহ সিদ্দিকী, আবদুল হাকিম চৌধুরী, বদরুজ্জামান সেলিম, অ্যাডভোকেট জেবুন্নাহার শেলিন, হেলাল উদ্দিন আহমদসহ একাধিক প্রার্থী।
সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট)
মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন মামুনুর রশীদ (চাকসু মামুন), সিদ্দিকুর রহমান পাপলু, আশিক উদ্দিন চৌধুরী, ভিপি মাহবুব ও জাকির হোসাইন।
সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার)
এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন ড. এনামুল হক চৌধুরী, ফয়সল আহমদ চৌধুরী, অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, আ.ম. অহিদ আহমদ, সামিরা হোসেন, তামিম ইয়াহিয়া আহমদ, চিত্রনায়ক হেলাল খান ও পপি খান।
দলীয় নির্দেশনা ও শৃঙ্খলা বার্তা
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, “আমরা সোমবার গুলশানে মনোনয়ন বোর্ডের সঙ্গে বসবো। কারা ডাক পেয়েছেন তা কেন্দ্র থেকে সরাসরি জানানো হচ্ছে।”
এর আগে ২০ অক্টোবর গুলশানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনের ১২৯ জন মনোনয়নপ্রত্যাশীর সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তিনি সবাইকে সংগঠন শক্তিশালী করা ও ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দেন এবং দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন।
দলীয় সূত্র জানায়, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে প্রতিটি আসনে ত্যাগী, যোগ্য ও জনপ্রিয় নেতাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে।
